সম্পদের বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা করো

সম্পদের সংজ্ঞা দাও (Definition of Resources)

সংজ্ঞাঃ সম্পদ কোন বস্তু বা পদার্থ নয়। বস্তু বা পদার্থের কার্যকারিতাই সম্পদ। এই কার্যকারিতা হলো বস্তু বা পদার্থের মধ্যে যে কার্যকরী শক্তি রয়েছে, যা মানুষের অভাব পূরণে সমর্থ হয়। 

সম্পদের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো

সম্পদের চারটি বৈশিষ্ট্য


সম্পদের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Resource )

(i) পদার্থের উপযোগিতা (Utility) থাকা চাই: কোন পদার্থ বা বস্তুর যদি মানুষের কাছে উপযোগিতা থাকে তবেই তা সম্পদ উৎপাদনে নিয়োজিত হবে। উদাহরণ – জমির উপযোগিতা রয়েছে। 

(ii) কার্যকারিতা (Functionability) : প্রাপ্ত হওয়া দরকারঃ বস্তুটি অভাব পূরণের উপযোগী হলেই চলবে না। একে অভাব পূরণে সমর্থও হওয়া চাই অর্থাৎ এর কার্যকরী শক্তি থাকা চাই। উদাহরণ—উপযোগী জমিটি থেকে ফসল উৎপাদন করতে হলে এর উৎপাদিকা শক্তি প্রয়োজন।

(iii) গ্রহণযোগ্যতা (Acceptability) থাকা চাই: সম্পদ-এর উপকরণের গ্রহণযোগ্যতা থাকা চাই। পরমাণু শক্তি উৎপাদন গ্রহণযোগ্য হলেও যুদ্ধ-বিগ্রহে পরমাণু শক্তির বিষ্ফোরণ গ্রহণযোগ্য নয়।

(iv) চাহিদা (Demand) আবশ্যক: সম্পদ উৎপাদন চাহিদা-নির্ভর। কি ধরনের উপকরণ সম্পদ উৎপাদনে নিয়োজিত হবে বা কতটা নিয়োজিত হবে তা মানুষের চাহিদার ওপর নির্ভর করে। ফসলের চাহিদা বাড়লে অধিকতর জমি কৃষিকাজে নিয়োজিত হয়। এভাবে বিদ্যুৎ, কাঠ, শিল্পদ্রব্য উৎপাদন উক্ত চাহিদা-নির্ভর। শীতবস্ত্রের চাহিদা থাকলেই পশম বস্ত্র উৎপন্ন হবে। খাদ্যের চাহিদা খুব বেশী থাকলে জমি মূলতঃ খাদ্য ফসল উৎপাদনে নিয়োজিত হবে। সম্পদের তিনটি বৈশিষ্ট্য লেখ

(v) ব্যবহার বা প্রয়োগযোগ্যতা (Applicability) : সম্পদ হতে গেলে ব্যবহারযোগ্যতা বা প্রয়োগযোগ্যতা থাকা চাই। সমুদ্রের তলদেশে অনবরত ম্যাঙ্গানিজের গোলা প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরী হয়ে যাচ্ছে। ভূ-ত্বকের মূল উপকরণ লোহা আর অ্যালুমিনিয়াম হলেও এগুলো সংগ্রহ এত ব্যয়বহুল যে এদের প্রয়োগ গুরুত্বই নেই।

সম্পদ কাকে বলে কত প্রকার

(vi) পরিবেশ বন্ধুত্ব (Environmental Friendlines) : সম্পদের অপর বৈশিষ্ট্য পরিবেশ বন্ধুত্ব। বহু প্রকার সম্পদ উৎপাদন করতে গেলেই পরিবেশ দূষিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সম্পদ উৎপাদন করতে গেলে পরিবেশের গুণমানের দিকে লক্ষ্য দিতেই হবে।

(vii) সৃষ্টিধর্মিতা (Creativity) : সম্পদ সৃষ্টিধর্মী হবে, ধ্বংসাত্মক হবে না । যে পরমাণু শক্তি যুদ্ধ-বিগ্রহে বা অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কাজে নিয়োজিত হয় তা সম্পদ নয়। কিন্তু সৃষ্টির কাজে যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদন, অন্তরীক্ষ গবেষণায় উপগ্রহ প্রেরণ ইত্যাদির জন্যে যে পরমাণু শক্তি ব্যবহৃত হয় তা কেবল সম্পদ।

(viii) স্থিতিস্থাপকতা (Elasticity) : সম্পদ স্থিতিস্থাপক বা গতিশীল বৈশিষ্ট্যের হয়। বিশেষ কয়েকটি দ্রব্যের যোগান সীমিত হলেও মানুষ কারিগরী উদ্ভাবনী শক্তির প্রয়োগে সীমিত বস্তু থেকেই সম্পদ উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। যেমন— ধরা যাক, ১ হেক্টর জমি থেকে আগে এক হাজার কেজি চাল উৎপাদন হতো, বর্তমানে সমপরিমাণ জমি থেকে ২ হাজার থেকে ৬ হাজার কেজি চাল উৎপন্ন হচ্ছে। সুতরাং জমির কার্যকারিতা অস্থিতিস্থাপক বা স্থানু নয়, বরং স্থিতিস্থাপক বা গতিশীল।

(ix) অধিগম্যতা (Accessibility) : সম্পদ হতে গেলে অধিগম্যতা খুব জরুরী। খনিজ দ্রব্য যদি ভূত্বকের খুব গভীরে বা গভীর সমুদ্রের নীচে বা এমন দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত হয় যেখান থেকে খনিজ আহরণের কোন সুযোগ নেই, তা অনধিগম্য বা মানুষের অভাব পূরণে নিয়োজিত হতে পারছে না বলে সম্পদ নয়।

Post a Comment

0 Comments