তরাই অঞ্চল কাকে বলে - তরাই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য-পশ্চিমবঙ্গের তরাই অঞ্চলের নদী-Terai region

পশ্চিমবঙ্গের তরাই অঞ্চলের নদী সম্পর্কে আলোচনা কর।

তরাই অঞ্চল কাকে বলে ?

 দার্জিলিং হিমালয়ের দক্ষিণে অবস্থিত এই অঞ্চলটির উত্তর সীমা সামান্য উঁচু (১৫০ মি.) হলেও সমগ্র দক্ষিণ অংশ জুড়ে বিস্তীর্ণ সমতলভূমি গঠিত হয়েছে।



দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমা, জলপাইগুড়ির পশ্চিমাংশ ও উত্তর দিনাজপুর জেলার উত্তরাংশ নিয়ে এই অঞ্চলটি গঠিত।

তরাই অঞ্চলের নদীর নাম

প্রধান নদনদী : তরাই অঞ্চলের প্রধান নদী তিস্তা। এছাড়া তোর্সা, জলঢাকা, মেচি, বালাসন, লিস, রায়ডাক, কালজানি নদী উল্লেখযোগ্য। 

তরাই অঞ্চলের নদীর বৈশিষ্ট্য :

(i) নদীগুলি স্বাভাবিক ঢালে অর্থাৎ উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত।

(ii) নদীগুলির মধ্যে তিস্তা, জলঢাকা, তোর্সা প্রভৃতি নদীই চিরপ্রবাহী।

(iii) সমভূমি অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় বিস্তীর্ণ নদীখাত ও অসংখ্য নদীবাঁকে নদীগুলি প্রবাহিত।

(iv) নদীগুলির অধিকাংশ অগভীর হওয়ার কারণে প্রতি বছর বর্ষাকালে বন্যা হয়। বন্যার কারণে এই অঞ্চলে প্রতিবছর নবীন পলির সঞ্চয় ঘটে।

(v) তিস্তা নদীর পূর্বপ্রান্তের অঞ্চলটি ডুয়ার্স নামে পরিচিত।


তরাই অঞ্চলের মাটি উর্বর কেন

(A) তরাই অঞ্চলের  কৃষিকাজ : নদীগুলিতে প্রতিবছর বন্যা হয় বলে স্থানীয় অঞ্চলে তেমন মাত্রায় কৃষিকাজের প্রসার ঘটে না। তবে এখানকার উর্বর মৃত্তিকা অঞ্চলে বিশেষ করে প্লাবন ভূমিতে মুঠো মুঠো বীজ ছড়িয়ে ফসল ফলানো হয়।

তরাই অঞ্চলের মাটি কেমন

 অতিরিক্ত বন্যার কারণে পর্যাপ্ত মাত্রায় স্থানীয় কৃষি জোতগুলিকে প্রতিনিয়ত পলির সঞ্জয় এর সাথে সাথে বালুকণারও সঞ্চয় ঘটে। ফলে নদীর বহন ক্ষমতা কমে যায় এবং বর্ষার অতিরিক্ত জল নদী বহন করতে না পেরে প্লাবন ঘটায়।

তবে তিস্তা প্রকল্প গৃহীত হওয়ার কারণে প্রচুর বৃষ্টিপাত, প্রায় সমতল ভূমি ইত্যাদির কারণে এখানকার জমিগুলিকে কৃষিকাজে উপযুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

এখানকার ডুয়ার্স অঞ্চলে চা, কমলালেবু ও আনারসের চাষ করা হয়। প্রায় ১৫০টি চা এর বাগান এখানে রয়েছে।

(B) তরাই অঞ্চলের ফসল : পশ্চিমের সমতলভূমিতে ধান, পাট, তামাক, আখ, জল সরসে প্রভৃতি শস্যের চাষাবাদ হয়।

 তরাই অঞ্চলের খনিজ সম্পদ : এই অঞ্চলটি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ নয়। অল্প পরিমাণে নিম্ন মানের কয়লা, আকরিক লোহা, তামা, চুনাপাথর, ডলোমাইট, বক্সাইট ডুয়ার্স অঞ্চল থেকে উত্তোলন করা হয়।

 তরাই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা : সাম্প্রতিককালে এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা যথেষ্ট ভালো। সড়ক পরিবহন, বিমান পরিষেবার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় মানুষ নদী পথকেও মাঝে মাঝে ব্যবহার করে থাকে।

 তরাই অঞ্চলের শিল্প : তেমনভাবে বৃহৎ শিল্পের বিকাশ ঘটেনি। 'চা' এখানকার প্রধান শিল্প। বনাঞলে ‘কাষ্ঠশিল্প' গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ার সহ বহু জায়গায় কাঠ চেরাই, প্যাকিং এর বাক্স, আসবাবপত্র গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া মাটিগাড়ার দুগ্ধ কেন্দ্র, জলপাইগুড়ির ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।

Post a Comment

0 Comments