Criticism of Malthusian Theory , ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব সমালোচনা

 ম্যালথাসের তত্ত্বের সমালোচনা (Criticism of Malthusian Theory)

ম্যালথাসের জনসংখ্যা 

তত্ত্বম্যালথাসের তত্ত্বের বিপক্ষে ও পক্ষে অনেক কথাই বলা হয়েছে।

 বিপক্ষীয় সমালোচনা

১. ম্যালথাসের মতে, জনসংখ্যা বাড়ে জ্যামিতিক হারে। কিন্তু খাদ্যোৎপাদন বাড়ে গাণিতিক হারে। কিন্তু শিল্প বিপ্লবের পরবর্তী অধ্যায়ে দেখা গেছে— ইউরোপের বহু দেশেই খাদ্যোৎপাদন বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে।

ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব,ম্যালথাসের তত্ত্বের সমালোচনা,Criticism of Malthusian Theory,ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব pdf,ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব কাকে

২. ম্যালথাসের তত্ত্ব কৃষি নির্ভর প্রথাগত সমাজ ব্যবস্থার চিন্তাধারায় রচিত। শিল্পোন্নতি কৃষিতে যে প্রযুক্তিগত উন্নতি এনেছে তা তিনি ভাবেননি। তাই খাদ্যোৎপাদনেও যে বিপুল বৃদ্ধি ঘটানো সম্ভব ম্যালথাস সেদিকে আলোকপাত করেননি।

৩. আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে খাদ্যোৎপাদনে ঘাটতি যে বিদেশ থেকে সুলভে আমদানি করে মেটানো যায় ম্যালথাস তা বিবেচনা করেননি। জাপান এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। 

৪. জনসংখ্যা বৃদ্ধি শ্রমসম্পদের যোগান নিশ্চিত করে। ফলে সম্পদের উন্নয়ন ঘটে। ম্যালথাস এ বিষয়ে নীরব ছিলেন।

 ৫. বর্ধিত জনসংখ্যাকে কেন্দ্রীভূত হতে না দিয়ে পরিকল্পত অর্থ ব্যবস্থায় বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিয়ে আঞ্চলিক খাদ্য ঘাটতি এড়ানো যেতে পারে। এটিও বিবেচনা করা হয়নি। 

৬.মানুষের প্রজনন ক্ষমতার ওপর অযথা জোর দেওয়া হয়েছে। প্রজনন ক্ষমতা থাকলেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এরূপ ধারণা ঠিক নয়। কেবল জৈবিক সম্পর্ক নয়, শিল্প, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক উন্নতি দ্বারা জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রভাবিত হয়।

৭.ইউরোপে কোনো কোনো দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিবর্তে হ্রাস পাচ্ছে। সুতরাং স্বাভাবিক অবস্থায় জনসংখ্যা সতত বৃদ্ধি পাবে এই ধারণাও ঠিক প্রমাণিত হয়নি

৮. পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়—শিক্ষার হারে উন্নতি জীবনযাত্রার মানে উন্নতি ঘটায় এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পায়।

৯.জনসংখ্যা জৈবিক তাড়নাগ্রস্ত কারণেই কেবল বৃদ্ধি পায় - ম্যালথাস-এর এরূপ মন্তব্যও ঠিক নয়। এরজন্য থাকে বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক এবং আর্থসামাজিক কারণও।

১০. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য মালথাসের নির্দেশিকা বিবাহ না করা অথবা বিলম্বে বিবাহ করা কোনো বাস্তবসম্মত বা আদরণীয় সুপারিশ নয়।

১১. কোন দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য এবং জনসংখ্যার অভাব থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, অন্যান্য সম্পদের সৃষ্টি ঘটবে এবং জমির জনসংখ্যা ধারণ ক্ষমতা বাড়বে। কিন্তু আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি জনসংখ্যার বৃদ্ধির হারকে কমিয়ে রাখবে।

১২. জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে কখনোই বৃদ্ধি পায় না যদি না জন্মহার মৃত্যু হার অপেক্ষা অনেক বেশি হয়।বাস্তবে যে সকল দেশে জন্মহার বেশি, সেখানে মৃত্যু হারও অপেক্ষাকৃত বেশি। ফলে প্রকৃত জনসংখ্যা বৃদ্ধি জ্যামিতিক হারে ঘটা সম্ভব নয়।

সপক্ষীয় সমালোচনা

১.ম্যালথাসের তত্ত্বে নির্দেশিত অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা খাদ্যের যোগানে ঘাটতি ঘটবে এটি সার্বিক সত্য না হলেও ইথিওপিয়া, সোমালিয়ার মত দেশগুলির ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য। দুর্ভিক্ষ, অনাহার, অপুষ্টি এই দেশগুলির নিত্যসঙ্গী এবং জনসংখ্যা হ্রাসের অন্যতম কারণ।

২. বর্তমান পৃথিবীর অধিকাংশ সমাজে ম্যালথাস নির্দেশিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আদৃত হয়েছে এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছে।

৩. জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য নর-নারীর জৈবিক আকর্ষণ যে অনেকাংশে দায়ী তাও অস্বীকার করা যায় না।

৪.  জনসংখ্যার অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ম্যালথাসের সাবধানবাণী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক, অর্থনীতিবিদ ও পরিকল্পনাকারদের সতর্ক করে দিয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে তারা উদ্যোগী হয়েছেন। 

 ৫. খাদ্যের যোগানে ঘাটতি জনসংখ্যার ওপর নির্ধারিত চাপ দেবে। যুদ্ধবিগ্রহ, দুর্ভিক্ষ ঘটার আশঙ্কা থাকবে। এই আশঙ্কা থেকেই জন্ম নেয় এরূপ বিপর্যয় যাতে না ঘটে সেজন্য চিন্তাভাবনা ও ফলে কার্যকরী পরিকল্পনা নেওয়া যায় যা মানবকল্যাণে নিয়োজিত হয়। 

উপসংহারঃ ম্যালথাসের তত্ত্বে যতই অবাস্তবতা থাকুক, বিশ্বের সবদেশেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে তা উৎসাহ যুগিয়েছে এবং বিশ্বের সামগ্রিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও হ্রাস পাচ্ছে। তাই ম্যালথাসের তত্ত্ব আজও জনসংখ্যা সম্পর্কিত একটি প্রাসঙ্গিক এবং অতি মূল্যবান তত্ত্ব এ বিষয়ে কোনোও সন্দেহ নেই।



Post a Comment

0 Comments