তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ , তেলেঙ্গানা বিদ্রোহের কারণ ? Telangana andolan

তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ

 ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে সামন্ততান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে হায়দরাবাদের তেলেঙ্গানার নালকোন্ডা, কুডাপ্পা, কুর্নুলসহ ন-টি তেলেগু ভাষাভাষি অঞ্চলের কৃষকগণ জোতদারদের বিরুদ্ধে যে-রক্তক্ষয়ী গণ আন্দোলন গড়ে তোলে, তা ইতিহাসে তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ 

(i) তেলেঙ্গানা বিদ্রোহের কারণ : হায়দরাবাদের তেলেঙ্গানা ছিল নিজাম শাসিত একটি দেশীয় রাজ্য। এখানে মধ্যযুগীয় সামন্ততান্ত্রিক শাসন কায়েম ছিল ।এখানকার কৃষকদের নিজস্ব কোনো জমি ছিল না। কৃষকরা ছিল বেআইনি শোষণের শিকার। জোতদারদের অর্থনৈতিক শোষণের জাঁতাকলে পড়ে কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে। বেট্টি প্রথা বা বেগার শ্রম অনুযায়ী এখানকার অসহায় কৃষকগণ জমিদার ও দেশমুখদের জমিতে বেগার খাটতে বাধ্য থাকত। অন্যদিকে ছিল রাজাকারদের (নিজামের সৈন্যবাহিনী) সীমাহীন অত্যাচার।

তেলেঙ্গানা আন্দোলনের দুজন নেতার নাম ? 

(ii) বিদ্রোহের নেতৃত্ব: এই পরিস্থিতিতে রবি নারায়ণ রেড্ডি ও ইমেলো রেড্ডি সেখানকার কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করতে এগিয়ে আসেন। অন্যদিকে অন্ধ্র মহাসভাও গোপনে জনমত গঠন শুরু করে। অত্যাচারিত কৃষকরা তাতে ব্যাপক সাড়া দেয়।

 (iii) বিদ্রোহের সূচনা: ১৯৪৬-১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ নিজাম স্বাধীন হায়দরাবাদ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিলে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধকালীন রেশন ব্যবস্থায় দুর্নীতি, বেট্টি প্রথার অবসান ও জোতদারদের শোষণ বন্ধ করতে প্রায় ৩০ লক্ষ কৃষক আন্দোলনে শামিল হয়। বিদ্রোহীরা প্রায় ২৫০০ গ্রামে নিজামশাহী শাসনের অবসান ঘটায়।

(iv) বিদ্রোহের পরিণতি: অবশেষে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন  ভারতের পদাতিক বাহিনীর প্রধান সেনাপতি জয়ন্তনাথ চৌধুর  হায়দরাবাদকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৯৫১ খ্রিস্টাকে বিদ্রোহীরা তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ প্রত্যাহার করে নেয়।

গুরুত্ব: এই বিদ্রোহ প্রত্যাহৃত হলেও এই আন্দোলনের  গুরুত্ব কম ছিল না, 

যেমন— তেলেঙ্গানা থেকে বেটি প্রথার অবসান হয়, জায়গিরদারি প্রথা বিলুপ্ত হয় এবং  ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের পথ প্রশস্ত হয়। এককথায় সেখান থেকে সামন্ততান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যায়।



Post a Comment

0 Comments